Thursday, May 19, 2016

তুমি কি কেবলই ছবি!!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ভিজুলয়াল অ্যান্ড মিডিয়া অ্যানথ্রোপলজি উইক-২০১৬। চমৎকার খবর! ডিপার্টমেন্ট এর সাবেক শিক্ষার্থী এবং মিডিয়াকর্মী হিসেবে আমি একটু বেশি আগ্রহ নিয়েই নিউজের লিংটা খুলেছিলাম। প্রথমে পাওয়া নিউজের লিংক নিচে দিলাম।

http://www.jagonews24.com/campus/news/99291/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%80-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%95

ছবিতে দুই নারী শিক্ষককে দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। মনে আছে, আমরা যখন প্রথমবর্ষে, তখন একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়েছিল। তখন তো বলা যায় আমরা রীতিমত শিশু! কেবল বড়দের কথা শুনে আর খুব করে ঢং সং করে ফটোসেশন করেই পার করে দিয়েছিলাম দুটোদিন। সেই প্রথম রাত করে টিএসসি থেকে বাড়ি ফেরা! কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু একলাইন দুই লাইন করে পুরো নিউজটা পড়ে কিছুটা যেন অস্বস্তি লাগলো। আবার পড়লাম, নাহ! অস্বস্তিটা মিথ্যা না। পুরো নিউজের কোথাও কোন নারী শিক্ষকের নাম নেই! স্বভাবত প্রথমে ভেবেছি খুব বেশি পরিচিত নিউজ পোর্টাল না। ওরা হয়তো ইচ্ছে করেই নারী শিক্ষিকদের নাম ছাপায়নি বা প্রয়োজন বোধ করে নি। ভেবেছে ছবিতো দিয়েছিই, আর কি! ঠিক যেমন বোর্ড পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পরদিন পেপার জুড়ে কেবল মেয়েদের ছবি থাকে! চলতি ভাষায় আমরা বলি পাবলিককে খাওয়ানো, ভদ্রভাষায় বলা হয় পাব্লিক ডিমান্ড!  ভাবতে ভাবতেই দেখলাম আরো একটি লিংক।

http://www.banglanews24.com/education/news/489170/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%95

এখানে ছবিটা দেখে মনে হলো উদ্বোধনের সময়কার ছবি। ভাবলাম যাক হয়তো তারা নারীকে পণ্য বানাবে না বলেই এই ছবিটা দিয়েছ। ভেতরেও হয়তো বদলটা চোখে পড়বে। কিন্তু না। যা ভেবেছিলাম তেমন কিছুই না। আগের নিউজ পোর্টালের মতই প্রায় একই ভাষার ব্যবহার। নিউজের ভেতরের মানুষ বলেই জানি, এ ধরনের নিউজ কম গুরুত্বপূর্ণ! তাই এসব নিউজ কাভার করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকতে হয়। তারপরেও কোন কোন ক্ষেত্রে সব থেকে কম দক্ষ কর্মীকে পাঠানো হয়। তাই ভাবছিলাম, হয়তো সংবাদ কর্মীই আসল ভুলটা করেছে। একবারের জন্যেও আমার মাথায় আসেনি অন্য কিছুও হতে পারে!!!

মাথায় আসলো তখন যখন আমার চোখ পড়লো এই নিউজে-

http://www.banglatribune.com/my-campus/news/105559/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%95

এখানেও একই ভাষার ব্যবহার এবং নারী শিক্ষকদের অনুপস্থিতি দেখে মাথায় আসলো, এ ধরনের ইভেন্টে আমি হলে কি করতাম? অবশ্যই দু' এক জন অর্গানাইজারের সঙ্গে কথা বলতাম, ভিসি স্যারের বাইট, চেয়ারম্যান স্যারের বাইট নিতাম, একটু ফুটেজ আর প্রেস রিলিজখানা নিয়ে নিতাম!!! পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টাল হলেতো কিছুই লাগে না! ছবি নিলে ভালো, নয়তো প্রেসরিলিজটাই সম্বল। আর এই প্রেস রিলিজ জিনিসটা প্রোভাইড করেছে অবশ্যই আয়োজক কমিটির কেউ। যারা ডিপার্টমেন্টএর নারী শিক্ষকদের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেন নি। এমন কি যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের চেয়েও সিনিয়র নারী শিক্ষক আমার ডিপার্টমেন্ট এ আছে, আমি জানি। আর প্রেস রিলিজ জিনিসটা তৈরি হয়ে যায় আগেই। অন্তত ফর্মেট রেডি করে রাখা হয়, শেষ সময়ে প্রিন্ট নেয়া হয়।
পুরো বিষয়টা হয়তো অনেকের কাছে খুব বড় কিছু না। চাইলেই হয়তো বিষয়টা ইগ্নোর করা যায়। হয়তো আমার নারী শিক্ষকরাও বিষয়টা গুরুত্ব দেবেন না। কিন্তু আমি পারছি না। কারন এটা আমার ডিপার্টমেন্ট, এখানে জীবনের সবচে মূল্যবান ৫ বছর ব্যয় করে আমি শিখেছি, "আমরা আর তোমারা" এই ধারনার বিপরীতে মানুষের যুগ যুগের লড়াই। সুবিধা প্রাপ্তর বিপরীতে সুবিধা বঞ্চিতকে কি করে টেনে তুলতে হয়। সেই ডিপার্টমেন্ট কিভাবে এরকম সেক্সিসস্ট একটা কাজ করতে পারে আমার বোধগম্য হয় না। পরে মনে হলো, ডিপার্টমেন্ট এর তো প্রাণ নাই! সে প্রাণ পায় তাকে চালিয়ে নেয়া মানুষগুলোর মাধ্যমে। এখানে সেসব নাইবা বললাম। সেটা অন্য গল্প হয়ে যাবে...!
সব শেষে আমার চোখে পড়লো এই লিংটা।

http://m.bdnews24.com/bn/detail/campus/1152837

ভারসাম্য এবং খারাপের মধ্য থেকে কিভাবে তুলনামূলক ভালোকে তুলে আনা যায় সেটাই দেখলাম। "কত কি শেখার এখনো বাকি... প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়..."
  

Thursday, November 27, 2014

শীত রাত - জীবনান্দ দাশ

এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।

শহর ও গ্রামের দূর মোহনায় সিংহের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে -
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।

এদিকে কোকিল ডাকছে - পউষের মধ্য রাতে;
কোনো-একদিন বসন্ত আসবে ব'লে?
কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো, তারই পিপাসিত প্রচার?

তুমি স্থবির কোকিল নও? কত কোকিলকে স্থবির হ'য়ে যেতে দেখেছি,
তারা কিশোর নয়,
কিশোরী নয় আর;
কোকিলের গান ব্যবহৃত হ'য়ে গেছে।

সিংহ হুঙ্কার ক'রে উঠছে:
সার্কাসের ব্যথিত সিংহ,
স্থবির সিংহ এক - আফিমের সিংহ - অন্ধ - অন্ধকার।
চারদিককার আবছায়া-সমুদ্রের ভিতর জীবনকে স্মরণ করতে গিয়ে
মৃত মাছের পুচ্ছের শৈবালে, অন্ধকার জলে, কুয়াশার পঞ্জরে হারিয়ে যায় সব।

সিংহ অরন্যকে পাবে না আর
পাবে না আর
পাবে না আর
কোকিলের গান
বিবর্ণ এঞ্জিনের মত খ'শে খ'শে
চুম্বক পাহাড়ে নিস্তব্ধ।
হে পৃথিবী,
হে বিপাশামদির নাগপাশ, - তুমি
পাশ ফিরে শোও,
কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর।

১৩৩৩ - জীবনান্দ দাশ

তোমার শরীর —
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর — মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানি নি তা — মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোনদিকে জানি নি তা — হয়েছে মলিন
চক্ষু এই — ছিঁড়ে গেছি — ফেঁড়ে গেছি — পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
কত দিন — রাত্রি গেছে কেটে!
কত দেহ এল, গেল, হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব — সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
বসে আছি — সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!
তোমার শরীর —
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর — মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোনদিকে — ফলে গেছে কতবার,
ঝরে গেছে তৃণ!
*
আমারে চাও না তুমি আজ আর, জানি;
তোমার শরীর ছানি
মিটায় পিপাসা
কে সে আজ! — তোমার রক্তের ভালোবাসা
দিয়েছ কাহারে!
কে বা সেই! — আমি এই সমুদ্রের পারে
বসে আছি একা আজ — ঐ দূর নক্ষত্রের কাছে
আজ আর প্রশ্ন নাই — মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে
চক্ষে তার — এলোমেলো রয়েছে আকাশ!
উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা! — তারই তলে পৃথিবীর ঘাস
ফলে ওঠে — পৃথিবীর তৃণ
ঝড়ে পড়ে — পৃথিবীর রাত্রি আর দিন
কেটে যায়!
উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা — তারই তলে হায়!
*
জানি আমি — আমি যাব চলে
তোমার অনেক আগে;
তারপর, সমুদ্র গাহিবে গান বহুদিন —
আকাশে আকাশে যাবে জ্বলে
নক্ষত্র অনেক রাত আরো,
নক্ষত্র অনেক রাত আরো,
(যদিও তোমারও
রাত্রি আর দিন শেষ হবে
একদিন কবে!)
আমি চলে যাব, তবু, সমুদ্রের ভাষা
রয়ে যাবে — তোমার পিপাসা
ফুরাবে না পৃথিবীর ধুলো মাটি তৃণ
রহিবে তোমার তরে — রাত্রি আর দিন
রয়ে যাবে রয়ে যাবে তোমার শরীর,
আর এই পৃথিবীর মানুষের ভিড়।
*
আমারে খুজিয়াছিলে তুমি একদিন —
কখন হারায়ে যাই — এই ভয়ে নয়ন মলিন
করেছিলে তুমি! —
জানি আমি; তবু, এই পৃথিবীর ফসলের ভূমি
আকাশের তারার মতন
ফলিয়া ওঠে না রোজ — দেহ ঝরে — ঝরে যায় মন
তার আগে!
এই বর্তমান — তার দু — পায়ের দাগে
মুছে যায় পৃথিবীর পর,
একদিন হয়েছে যা তার রেখা, ধূলার অক্ষর!
আমারে হারায়ে আজ চোখ ম্লান করিবে না তুমি —
জানি আমি; পৃথিবীর ফসলের ভূমি
আকাশের তারার মতন
ফলিয়া ওঠে না রোজ —
দেহ ঝরে, তার আগে আমাদের ঝরে যায় মন!
*
আমার পায়ের তলে ঝরে যায় তৃণ —
তার আগে এই রাত্রি — দিন
পড়িতেছে ঝরে!
এই রাত্রি, এই দিন রেখেছিলে ভরে
তোমার পায়ের শব্দে, শুনেছি তা আমি!
কখন গিয়েছে তবু থামি
সেই শব্দে! — গেছ তুমি চলে
সেই দিন সেই রাত্রি ফুরায়েছে বলে!
আমার পায়ের তলে ঝরে নাই তৃণ —
তবু সেই রাত্রি আর দিন
পড়ে গেল ঝ’রে।
সেই রাত্রি — সেই দিন — তোমার পায়ের শব্দে রেখেছিলে ভরে!
*
জানি আমি, খুঁজিবে না আজিকে আমারে
তুমি আর; নক্ষত্রের পারে
যদি আমি চলে যাই,
পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
যদি আমি —
আমারে খুঁজিতে তবু আসিবে না আজ;
তোমার পায়ের শব্দ গেল কবে থামি
আমার এ নক্ষত্রের তলে! —
জানি তবু, নদীর জলের মতো পা তোমার চলে —
তোমার শরীর আজ ঝরে
রাত্রির ঢেউয়ের মতো কোনো এক ঢেউয়ের উপরে!
যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
যদি আমি চলে যাই
নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!
*
তুমি যদি রহিতে দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায়, তবু যদি তোমার দু — পায়ে
হারায়ে ফেলিতে পথ — চলার পিপাসা! —
একবারে ভালোবেসে — যদি ভালোবাসিতে চাহিতে তুমি সেই ভালোবাসা।
আমার এখানে এসে যেতে যদি থামি! —
কিন্তু তুমি চলে গেছ, তবু কেন আমি
রয়েছি দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায় — তবু কেন আমার এ পায়ে
হারায়ে ফেলেছি পথ চলার পিপাসা!
একবার ভালোবেসে কেন আমি ভালোবাসি সেই ভালোবাসা!

*
চলিতে চাহিয়াছিলে তুমি একদিন
আমার এ পথে — কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন।
জানি আমি, আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই।
তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি! — তাই আস নাই
আমার এখানে তুমি আর!
একদিন কত কথা বলেছিলে, তবু বলিবার
সেইদিনও ছিল না তো কিছু — তবু বলিবার
আমার এ পথে তুমি এসেছিলে — বলেছিলে কত কথা —
কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন;
আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই;
তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি — তাই আস নাই!

*
তোমার দু চোখ দিয়ে একদিন কতবার চেয়েছ আমারে।
আলো অন্ধকারে
তোমার পায়ের শব্দ কতবার শুনিয়াছি আমি!
নিকটে নিকটে আমি ছিলাম তোমার তবু সেইদিন —
আজ রাত্রে আসিয়াছি নামি
এই দূর সমুদ্রের জলে!
যে নক্ষত্র দেখ নাই কোনোদিন, দাঁড়ায়েছি আজ তার তলে!
সারাদিন হাঁটিয়াছি আমি পায়ে পায়ে
বালকের মতো এক — তারপর, গিয়েছি হারায়ে
সমুদ্রের জলে,
নক্ষত্রের তলে!
রাত্রে, অন্ধকারে!
তোমার পায়ের শব্দ শুনিব না তবু আজ — জানি আমি,
আজ তবু আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

*
তোমার শরীর —
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর, মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন।
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোনদিকে জানি নি তা — হয়েছে মলিন
চক্ষু এই — ছিঁড়ে গেছি — ফেঁড়ে গেছি — পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
কত দিন — রাত্রি গেছে কেটে
কত দেহ এল, গেল — হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব — সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
বসে আছি — সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!

Thursday, January 23, 2014

এখনো শেখার বাকি দেশপ্রেমের প্রথম পাঠ

ঘটনা ...
নিউ ইয়র্কের ভারতীয় কনসুলেটের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল দেবযানীকে ভিসা আবেদনে ভারতীয় গৃহকর্মীর বিষয়ে ভুয়া তথ্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দেয়ার সময় রাস্তা থেকেই দেবযানীকে গ্রেপ্তার করে প্রকাশ্যে তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হয়। ভারতের দাবি ওই কূটনীতিককে বিবস্ত্র করে তার দেহে তল্লাশি চালানোর পর তাকে মাদক চোরাচালানী ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে কারাকক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে আড়াই লাখ ডলার জামিনে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। দুই কন্যা সন্তানের জননী ৩৯ বছর বয়সী দেবযানী কন্স্যুলেটের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নারী বিষয়ক কনসাল জেনারেল।

প্রতিক্রিয়া:
  • ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দেবযানীকে ‘কূটনৈতিক সুবিধা’ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘বর্বর আচরণ’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
  • সরকারের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘আচরণের’ প্রতিবাদস্বরূপ ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দেননি।
  • রাহুল গান্ধী ও মোদির সঙ্গে ওই প্রতিনিধি দলের আলাদা বৈঠকের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তারা তা বাতিল করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দেও তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।
  • দেবযানীকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন ও লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারও যুক্তরাষ্ট্রর কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বর্জন করেন।
  • ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে পাল্টা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
  • দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে থেকে নিরাপত্তা ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়েছে।
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের জন্য বিমান বন্দরের পাস বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জন্য আমদানি ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
  • দূতাবাসের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা নিয়মিত কর দেন কি না, তা দেখতে ভিসাসহ তাদের বেতন ও ব্যাংক হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য চেয়েছে ভারত।
  • যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেটের সব কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র অবিলম্বে জমা দেয়ার নির্দেশসহ তাদের ও তাদের পরিবারের গৃহকর্মীরাসহ সব বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর।
  • পুরো জাতি যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা পাঠাতে চাইছে যে, তাদের দেবযানী বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ ভারত চুপচাপ মেনে নিচ্ছেনা।
ঘটনা ২...
‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের’ একনিষ্ঠ সমর্থক কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ জানিয়ে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান পার্লামেন্টে শোক প্রস্তাব গ্রহণ। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা নির্দোষ ছিলেন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা ইমরান খান।

প্রতিক্রিয়া:
  • আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের পদক্ষেপকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নাক গলানোর শামিল’ বিবেচনা করে তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
  • এবিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ৩৬ ব্যক্তি। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, “যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী ঘটনাগুলো আমাদের দারুণভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।
  • একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং ৭১’এ নির্যাতিত নারীদের নেতৃত্বে পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করছে গণজাগরণ মঞ্চ।
ঘটনা ...
মহান বিজয় দিবস সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠানে যাননি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা। রীতি অনুযায়ী এ দিনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই বিদেশী কূটনীতিকরাও সেখানে উপস্থিত থাকেন। আগেরদিন বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের অফিস থেকে এক বার্তায় জানানো হয় যে এবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারা যোগ দিচ্ছেন না। যোগ না দেবার কারণ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি বিষয় উল্লেখ করে।
প্রথমত: ১৬ ডিসেম্বর তাদের একটি সমন্বয় সভা আছে।
দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন যেটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তারা জমা দেবেন। একারনে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা ব্যস্ত থাকবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বিদেশী কূটনীতিকদের যোগ না দেবার ঘটনা অতীতে কখনোই ঘটেনি। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়া বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননাকর বলেও জানানো হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। কিন্তু গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার পরও সাভারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাননি ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকে সে সমন্বয় সভার কথা বলা হচ্ছে সেটি শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে দশটার পরে। কিন্তু স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা সাধারণত সকাল সাতটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

প্রতিক্রিয়া:
  • বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়।
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টি জানিযে বলা হয় “বাংলাদেশ চিন্তাই করতে পারছেনা যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেযোগদান থেকে বিরত থাকতে পারে। বিজয় দিবস বাংলাদেশের মানুষের আবেগ এবং গর্বের বিষয়”
আমার শিক্ষা...
নকল করতে ওস্তাদ আমরা। জামা কাপড় থেকে শুরু করে গান খাবার কোথায় নেই নকল করার প্রবণতা। ভারতীয় পণ্য, পাকিস্তানের লন না হলে আমাদের ফ্যাশণ পূর্ণতা পায় না। প্রতি ঈদে ভারতের নায়িকাদের নামের পোশাক গায়ে না চড়ালে আমাদের ইজ্জত থাকে না। অথচ ভারত-পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশপ্রেম শিখে উঠতে পারলাম না। দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দল কিভাবে এক হয়ে কাজ করে এটা শিখে উঠতে পারলাম না। এখোনো শেখা হয়নি কিভাবে দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তান জিন্নাহ কে জাতির পিতা সম্বোধন করে। তখন পাকিস্তানের জাতির পিতা আর মুসলিম পাকিস্তানিদের জাতির পিতায় কোন কাটাকাটি লাগে না। আবার কংগ্রেস-বিজেপি এক মঞ্চে দাড়িয়ে যখন গান্ধির জন্ম মৃত্যু দিবস পালন করে তখন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বাধা হয়ে আসে না। জাতি হিসেবে আমরা অনেক গর্ব  করি। আমাদের জাতীয়তা বোধের ভারে দেশ রীতিমত ভারাক্রান্ত। অথচ আজও আমরা এক জাতি হয়ে উঠলাম না।

সকাল সকাল গানটা মাথায় এসেছিল।

“মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই
দীন দুখিনী মা যে তোদের তার বেশী আর সাধ্য নাই।।
ঐ মোটা সুতোর সঙ্গে মায়ের অপার স্নেহ দেখতে পাই
আমরা এমনি পাষাণ,তাই ফেলেঐ, পরের দোরে ভিক্ষে চাই।।
ঐ দু:খী মায়ের ঘরে তোদের সবার প্রচুর অন্ন নাই,
তবু তাই বেচে কাঁচ, সাবান, মোজাকিনে করলি ঘর বোঝাই।।
আয়রে আমরা মায়ের নামে এই প্রতিজ্ঞা করব ভাই
পরের জিনিস কিনব না যদি-মায়ের ঘরের জিনিস পাই।”

বাঙালির প্রথম কাপড়কল 'বঙ্গলক্ষ্মী কটনমিল'-এর মোটা সুতোয় শাড়ি তৈরি উপলক্ষে এই গানটি লেখেনরজনীকান্ত সেন। পরে স্বদেশি আন্দোলনে বিদেশি পণ্য বর্জনের কর্মসূচি প্রচারে মূল ভূমিকা পালন করেছিল এই গান। আমাদের আসলে আবারো একটা স্বদেশী আন্দোলন দরকার। দিন শেষে আশার আলো পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে গণজাগরণ মঞ্চের মিছিল এবং অবস্থান। গণজাগরণ মঞ্চই করতে পারবে আরো একটা স্বদেশী আন্দোলন।

আমি লজ্জিত, ক্ষুব্ধ এবং আতংকিত

সমস্ত সুশীলতার মুখে ঝাড়ু মেরে বলছি হ্যাঁ আমি লজ্জিত!!! আমার দেশের বিরোধী দলীয় নেতা সরকার হটাতে একটা কর্মসূচি দিয়েছিলেন যার নাম তিনি নিজেই ভুলে গেছেন। অথচ সেই নাম জপতে জপতে তার দলে নেতা কর্মীরা শহীদ হওয়ার পথে। এজন্য পার হেড ১ হাজার টাকা বরাদ্দ করেও তাদের রাজপথে পাওয়া যায় না। ঠগ বাছতে গা উজাড় হওয়ার মতই ১৮ দলের জামায়াত বাছতে বিএনপি উজাড় হওয়ার পথে এসে দাড়িয়েছে। এই সাধারন কথাটি যে কোন সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারলেও বিএনপির কোন অদৃশ্য মধু খাওয়া সমর্থকরা (আহাম্মক বিশেষণ সহযোগে পড়ুন) সেটা বোঝেনা নাকি মধুর লোভে না বোঝার ভান করে সেটা আমি বুঝি না। হয়তো আমি বড় আহাম্মক। আমি লজ্জিত আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী অপমানের জবাবে মার্কিন মুল্লুকের সাংবাদিককে ধমক দিলে সেটা হয় শিষ্ঠাচার বর্হিভূত কাজ। আর ভরা মজলিশে ক্যামেরা, বুম এবং সাংবাদিকদের সামনে অসভ্য ভাষায় ধমকা-ধমকি করলে সেটা তালি পায়। তিনি কার উদ্যেশে সেই ধমক দিয়েছেন সেটা আমি জানতে চাই না। আমি কেবল জানি কোন ভদ্রলোক পাবলিক প্লেসে এমন ভাষা ব্যবহার করে না। প্রটোকলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে এভাবে বলতে পারেন কিনা সে গবেষণায় আর নাইবা গেলাম।

আমি ক্ষুব্ধ তিনি আমার এলাকার সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন। তিনি বিরোধীদলের নেতা হতে পারেন কিন্তু এই অধিকার আমি তাকে দেই না। আমি প্রশ্ন করি সুশীল নামক বিএনপির(পড়ুন জামায়াত! কারণ আমার মতে, বিএনপি নামক দলটি জামায়াতের রশি গলায় দিয়ে আত্মহত্যা করেছে) সেইসব জারজ সন্তানদের কাছে, যারা আদিবাসী না বলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বললে নাকি ওই জাতির অপমান হয় বলে গলা ফাটিয়েছেন বিভিন্ন সময় তারা আজ কোথায়? নাকি তারা আজও উপনিবেশিক ভৃত্য হয়ে আছেন, যাদের সাদা চামড়ার মুখ নিসৃত সব কথাই, অমৃত বাণী লাগে? আমি ক্ষুব্ধ কারন কেবল ব্যক্তিগত আক্রোশকে তিনি জাতীয় কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন। তার কথায় আজ স্পষ্ট তিনি আওয়ামীলীগকে ঘৃণা করেন, ঘৃণা করেন শেখ হাসিনা তথা শেখ মুজিবের পরিবারকে। কিন্তু কেন? এই পরিবারটি দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তাই? যে দলটির তিনি প্রধান সেই দলের প্রষ্ঠিাতার কোন লেখা বা কথায় আমি্ শেখ মুজিব বা তার পরিবারের প্রতিতো ঘৃণা দেখতে পাইনি!!! শেখ মুজিবের মৃত্যু কোন একজনের ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ নয়। তবে মহামাণ্য বিরোধী দলের নেতার এক ব্যক্তিগত ঘৃণার কারন কি?
আমি আতংকিত, গোপালগঞ্জের মানুষের প্রতি তার যে আক্রোশ তিনি আজ প্রকাশ করেছেন খোদা না করুক তিনি ক্ষমতায় গেলে গোপালগঞ্জ নামক জেলাটিকে তিনি উজাড় করে দেবেন বলে আমি আশংকা করছি। যদিও দীর্ঘ দিন বসবাস করায় আমার নাড়ির টান, মনের টান এবং স্থায়ী ঠিকানা সবই খুলনার কিন্ত শিকড়ের টান এখনো রয়ে গেছে। সেই্ টানেই হয়তো আজ লেখার তাগিদ অনুভব করছি। তিনি যেভাবে করে আল্লার গজব পড়বে বললেন, তাতে আমি সত্যি সত্যি আতংক বোধ করছি সেই গজবটা আল্লাহ না ফেললেও তিনি সুযোগ পেলে অবশ্যই ফেলবেন। এমন ঘৃণা বুকে নিয়ে একটা না আরো ৪/৫ টা ২১ আগষ্ট ঘটিয়ে ফেলা সম্ভব।

যারা আমাকে আওয়ামীলীগের দালাল বলে গালি দিয়ে মনে মনে সুখ অনুভব করছেন অথবা বলছেন “আসছে নব্য আওয়ামীলীগার” তাদের বলছি, দান কিন্তু ঘর থেকেই শুরু হয়। নিজের দেশের মানুষ এবং জায়গা সম্পর্কে এই পরিমান ঘৃণা পোষণকারীকে আর যাই হোক দেশপ্রেমিক বলা চলে না। আর তারও চেয়ে বড়ো কথা এই দলটির নুন খাইনি, কখনো খাওয়ার সম্ভাবনাও নাই। তাই আওয়ামীলীগ নামক দলটির গুন গাইতেও বসিনি। আমি কেবল এই দলটির কাছে কৃতজ্ঞ তারা এই দেশের মাটিতে জন্ম নেয়া কিছু কুলাঙ্গারের বিচারের ব্যবস্থা করেছে। যদিও তার অবস্থা “কানা মামা”-র মত! তবু নাই মামার চেয়ে আমার কানা মামাই ভালো। আর বিএনপি নামক দলটিযে সব লজ্জা শরমের মাথা সেই কুলাঙ্গারদের বাঁচাতে মরিয়া সেটা আর নতুন করে প্রমাণের কিছুই নাই। বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছেড়ে এসে দেখতেন আপনার পাশে কত মানুষ থাকতো। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আপনাকে কোন কষ্টই করতে হতো না। একাকী ঘরে গ্রেফতার আতংকে ভুগে জঙ্গি রাজনৈতিক গোষ্ঠীরমত ভিডিও বার্তাও পাঠাতে হতো না।

কিন্তু এখন এই আপনার অবস্থা দেখে আমার যা মনে হচ্ছে তা বলতে কবি গুণকে স্মরন করে বলতে হয় “ এতই যদি গ্রেফতার আতংক তবে কর্মসূচি দিয়েছিলে কেন”

Tuesday, November 26, 2013

আমিই সেই মেয়ে --- শুভ দাশগুপ্ত

আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।

বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।

রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।

সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

আপনি, আপনারা..
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ

হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

Monday, November 18, 2013

যাত্রাভঙ্গ --- নির্মলেন্দু গুণ

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।

হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।

নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।

পল্লী-বর্ষা --- জসীমউদ্দীন

আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে-ঘোলাটে মেঘের আড়ে,
কেয়া বন পথে স্বপন বুনিছে-ছল ছল জলধারে।
কাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে-নিঝ্ঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেনু খুলিয়া দিয়াছে-অস্ফুট কলিকায়।
বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে, হেসে কুটি কুটি হয়।
সে হাসি তাহার অধর নিঙ্গাড়ি, লুটায়িছে বনময়।
কাননের পথে লহর খেলিছে, অবিরাম জলধারা।
তারই স্রোতে আজি শুকনো পাতারা, ছুটিয়াছে ঘরছাড়া।

হিজলের বনে, ফুলের আখরে, লিখিয়া রঙিন চিঠি,
নিরালা বাদলে ভাসাইয়া দিয়াছে, না জানি কোন দিঠি।
চিঠির উপরে চিঠি ভেসে যায়, জনহীন বন বাঁটে,
না জানি তাহারা ভিড়িবে যাইয়া-কার কেয়া বন ঘাটে।
কোন সে নিরালা বুনো ঝাউশাখে, বুনিয়া ঘোলাবি শাড়ি-
হয়তো আজিও চেয়ে আছে পথে, কানন কুমার তারই।

এদিকে দিগন্তে যতদূর চাহি, পাংশু মেঘের জাল-
পায়ে জড়াইয়া পথে দাড়ায়েছে, আজিকার মহাকাল।

গাঁয়ের চাষিরা মিলিয়াছে আজি-মোড়লের দলিজায়,
গল্পে গানে কি জাগাইতে চাহে-আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখাড়ি চাছিছে, কেউ পাকাইছে রশি।
কেউবা নতুন দুয়ারির গায়ে, চাকা বাঁধে কসি কসি।
কেউ তুলিতেছে বাঁশের লাঠিতে, সুন্দর করে ফুল।
কেউবা গড়িছে সারিন্দা এক কাঠ কেটে নির্ভুল।

মাঝখানে বসে গাঁয়ের বৃদ্ধ, করুন ভাটির সুরে-
আমির সাধুর কাহিনি কহিছে, সারাটি দলিজা জুড়ে।
লাঠির উপরে, ফুলের উপরে, আকা হইতেছে ফুল-
কঠিন কাঠ সে সারিন্দা হয়ে, বাজিতেছে নির্ভুল।
তারই সাথে সাথে গল্প চলছে-আমির সাধুর নাও,
বহুদেশ ঘুরে আজিকে আবার-ফিরিয়াছে নিজ গাঁও।
ডাব্বা হুকা ও চলিয়াছে ছুটি-এর হাতে ওর হাতে,
নানান রকম রশি বুনানো-হইতেছে তার সাথে।

বাহিরে নাচিছে ঝর ঝর জল, গুড়ু গুড়ু মেঘ ডাকে।
এসবের মাঝে রুপকথা যেন, আর রুপকথা আঁকে।
যেন ও বৃদ্ধ গাঁয়ের চাষিরা-আর ওই রুপকথা,
বাদলের সাথে মিশিয়া গড়িছে-আরেক কল্পলতা।
বউদের আজ কোন কাজ নাই, বেড়ায় বাধিয়া রশি,
সমুদ্র কলি শিকা বানাইয়া-নীরবে দেখিছে বসি।
কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া, বুকের স্বপ্ন খানি-
তারে ভাষা দেয় দীঘল সুতার-মায়াবি আখর টানি।

আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন, ছল ছল জলধারে-
বেনু বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে

Friday, October 25, 2013

স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা”/ সুখপাঠ্য নয় তবে প্রয়োজনীয় পাঠ্য

সংগ্রহ পর্ব

এটিএন নিউজের নিউজ এবং কারেন্ট এ্যফেয়ার্স এডিটর প্রভাষ আমিনের লেখা বইয়ের নাম “স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা” যদিও নামটি পড়ে কারোই বোঝার সাধ্য নেই এটা আসলে কিসের বই‍!!! নামের মধ্যেই দারুন নাটকীয়তা। তার চেয়েও বড় নাটকের জন্মদিয়ে বইটি আমার হস্তগত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩’র একুশে বই মেলায়, কিন্তু আমার তখন বইটি কেনা হয়ে ওঠেনি। এরপর প্রভাষ’দার নিয়মিত রিমাইন্ডারের ফলে একদিন সত্যি সত্যি বইটি কেনার জন্য হাজির হলাম আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানে। কিন্তু হাজির হলেই তো আর হবেনা, সেখানে তো বইটি পেতে হবে! সব দোকান খুঁজে পেতে যখন প্রায় কনফিউজড (এরই মধ্যে আমি আরো দুটো বই কিনে ফেলেছি এবং নির্ধারিত বই কেনার টাকা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। তখন প্রভাষ’দা জানালেন তার বইটি আজিজে পাওয়া যাবেনা। একটি এজেন্সির নাম জানিয়ে বললেন, অনলাইনে অর্ডার দিলে তাঁরা পৌছে দেবে। কিন্তু আমার তক্ষুনি বইটি চাই চাই… কারন আমার আশংকা ছিল সেই বই আমার হাতে আসতে আসতে হয়তো আমি বাকি টাকা শেষ করে ফেলবো :P । শেষে দাদা জানালেন, হয়তো কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ঐতিহ্যের শোরুম আছে যেখানে বইটি পাওয়া যেতে পারে। এরপর অভিযান কাটাঁবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে…ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি! আপনারা হয়তো ভাবছেন, কি আছে সেই বইএ? কি জানতে পারবেন বইটি পড়ে? হ্যাঁ ক্যনভাসারদের মত বলতে পারি, এই বইটি পড়লে জানতে পারবেন… 

থাক, সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসি। আগে সেই বই কেনার কাহিনী শেষ করি। কনকর্ড এম্পোরিয়ামে পৌছে, এই দোকান সেই দোকান ঘুরে (বই এর দোকানে ঘুরতে খুব একটা খারাপ লাগেনা। দোকান পুরোনো হলে একটু হাচিঁ টাচি হয়, তবে এই মার্কেটের দোকান গুলো ঝা চকচকে) আমি যখন ঐতিহ্যের দরজায় পৌছালাম তখন দেখি দরজা বন্ধ  :( পাশের দোকানী বললেন, বন্ধনা, ওই দোকানের লোক নামাজ পড়তে গেছে। আমি আর কি করি, যে দোকানগুলো ঘোরা বাকি ছিল সেগুলো ঘুরে দেখতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে গেলাম পরিচিত এক ভাইকে, যার সঙ্গে অনেক বছর পর দেখা। অনেক অনেক গালগল্প শেষে আবার ফিরলাম ঐতিহ্যে এবং বইটিও খুঁজে পেলাম… :)।

যারা ভাবছেন যাক!!! শিবেরগীত অবশেষে শেষ হলো তাদের আশাহত করে জানাচ্ছি পিকচার আবভিবাকি মেরে দোস্ত ;) ।

বইতো পেলাম, কিন্তু বই’র দাম দেখেতো আমার চক্ষুস্থির ৩ শত ৭৫ টাকা মাত্র। কমিশন টমিশন কি কি সব বাদ দিয়ে, ২ শত ৮০ টাকা। আচ্ছা ঠিক আছে মারি তো গন্ডার লুটিতো ভান্ডার এই ভেবে মানি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি আমি ইতোপূর্বে আরো ৩ টি বই কিনে টাকা খরচ করে ফেলায়, কিছু টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। আর বইটারও এমনই কপাল,সবসময় ব্যাগের বিভিন্ন চিপা চাপায় খুঁজলে কিছু না কিছু বের হয় অথচ সেদিন একটি ফুটো পয়সাও বেরোলোনা। কয়েকটি টাকার অভাবে বইখানি আবার শেলফ’এ রেখে ফিরে এলাম আর দোকানীকে কথা দিয়ে এলাম পর দিন অবশ্যই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। এর মধ্যে আবার প্রভাষ’দা :( … জানালাম বিশেষ জটিলতার কারনে বইটি সংগ্রহ করা হয়নি এবং তাকেও একই আশ্বাস দিলাম পরদিন নিশ্চই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। ভদ্রলোকের ১ জবান, নড়চড় নাই। সেজন্যই বইটি আজ আমার আশে পাশেই মহা আনন্দে গড়াগড়ি খায়।


অবশেষে আমি বইটি শেষ করেছি
বইটি কিনে বাসায় পৌছাতে যতটুকু সময় ঠিক ততটুকু সময় পরেই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম... নাহ্ একটু ভুল হলো, পড়তে শুরু করার আগে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বইটি উল্টে পাল্টে গবেষণা করেছি। গবেষণা করার অনেক কারন ছিল। এটা সেই বই, যে বই আমি রীতিমত অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়ে কিনেছি :D ... যেই বইটার জন্য কেবল বইয়ের লেখক নন আমার জানা চেনা আরো অনেকেই প্রচার চালিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যানেল আই’র নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান। প্রথমে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা খানিকটা আন্দাজ করেছি। কিন্তু বইটিতে লেখকের ভুমিকা পড়ে বুঝলাম আমার আন্দাজ ভুল নয়। মুখবন্ধে মুন্নী সাহার লেখাটি পড়ে বুঝতে পারলাম প্রভাষ’দাকে আসলে সবাই ভীষন পছন্দ করে। তিনি যে মিশুক, বন্ধুবৎসল এটা আগেই জানা ছিল। দারুন সেন্স অব হিউমারের অধিকারী এটাও আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তা যে এতটা তা আগে বুঝতে পারিনি। পড়া শুরু করতেই বুঝলাম এই বইয়ে স্থান পাওয়া অনেক গুলো লেখা আমি আগেই পড়ে ফেলেছি। এখানে প্রশ্ন করাই যেতে পারে তাহলে… তাহলে শুধু শুধু আমি বইটি কেন কিনলাম!?! এই প্রশ্ন মনে আসাই স্বাভাবিক। এই উত্তরের আগে ছোট্ট করে বলে রাখি অটোগ্রাফ কাহিনীটা। বইটি কিনে আগে প্রভাস'দা কে একটা ধন্যবাদ দেই কারন তাঁর কল্যাণেই বইএর একটা চমৎকার মার্কেট খুঁজে পেলা। জবাবে তিনি জানান, "বেশতো রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হলো।" আমি উত্তর দেই " নাহ কলা কিনতে গিয়ে পুরো কলা বাগান পেয়ে গেলাম B-) ।" এ কথা কেন বললাম সেটা প্রভাষ'দার অটোগ্রাফ নোটটা দেখলেই বোঝা যাবে।

পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম এতো কাহিনী করে বইটি কিনে আমি একটুও ভুল করিনি। এই বইকে মোটেও কাঁচকলা বলে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই… বরং আমাদের প্রজন্মের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি বই। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে একজন তরুণ তার সময়টাকে কিভাবে দেখতো বিচার করতো সেটা যেমন বোঝা যায় তেমনি সেই সময়টা কেমন ছিল সেটাও জানতে পারা যায়। পড়তে পড়তে আমার চোখে গণমাধ্যম, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, সচেতনতার তখন আর এখন ঠিক যতটা ধরা পড়েছে, তেমনটাই জেনেছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা, এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে এক তরুণ গণমাধ্যম কর্মীর ভাবনা। আবার চিত্রপটের ভিন্নতায় সেই তরুণকে দেখতে পাই একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক অবস্থায় আমাদের বয়সের তার সময়কে বিচার বিশ্লেষন করতে।

কেবল সেই সময় এই সময়ই না, সমসাময়ীক বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষন খুঁজে পাই একজন সচেতন মানুষ এবং সমান্তরাল ভাবে একজন সাংবাদিকের চোখে। এসব ঘটনার খুটিনাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এমন আরো বিভিন্ন বিষয়কে তুলে এনেছেন যা কিনা একজন সংবাদকর্মীর জানা থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতেই, প্রতিটি সংবাদকর্মীর পালন করা উচিত এই বিষয়গুলো।লেখক বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে মিডিয়ার অসচেতনতার যেমন কড়া সমালোচনা করেছেন পাশাপাশি মিডিয়া সচেতন এবং শক্তিশালী হলে কি কি অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা যায় সেটাও উদাহারণসহ ব্যাখ্যা করেছেন। তথ্য বহুল এই বইটি তাই কেবল পড়লেই হবেনা, সংগ্রহেও রাখতে হবে।

সাংবাদিকতা পেশাকে তীব্র ভাবে ভালোবেসে এক তরুণের সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার অনেক ছোট ছোট গল্পের সঙ্গে সেই তরুণের শিশুকাল থেকে গড়ে ওঠা অনেক ভাবনা এবং জীবন দর্শনও বিভিন্ন অলিগলি আর চোরা পথে এসে মিলে গেছে লেখার মাঝে। এই বৈচিত্রর ফলে বইটি পড়তে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা থেকে আনন্দ নিংড়ে নেয়ার যে অসাধারণ বর্ণনা আছে তাতে কেবল লেখকের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ পায় তা নয়, বোঝা যায় তাঁর অসামান্য প্রাণ শক্তি।

তাই ব্যক্তিগত যায়গা থেকে আমি বলতে পারি বর্তমান সময়ে যেকোন অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতিতে প্রভাষ আমিনের একটি বিশ্লেষন ধর্মী লেখার জন্য আমি যেমন করে অপেক্ষায় থাকি, ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করছি পরের বইটির জন্য।


পুণশ্চ: বইটি পড়া শুরু করলেই বোঝা যাবে, বইটি পড়তে আমি এত সময় কেন নিয়েছি.... এটা গোগ্রাসে গেলার মত কোন বই না। এটা অনেক ধীরে সুস্থে পড়তে হবে। কারন এই বইয়ের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে.... :)

কনিফউশান

ঈদে বা ছুটি ছাটায় যাতায়াত সময় বাচাঁতে আমি ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভেঙে ভেঙেই খুলনা যাই। এজন্য টিকিট নিয়ে খুব একটা তোড়জোড় থাকেনা। উদ্দেশ মানে যদি destination না ধরে plan ধরা হয় তবে আমার এই যাত্রাকে অনেকটাই নিরুদ্দেশ যাত্রা বলা যায়। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি! ৭ তারিখে অফিস করে তাড়াহুড়া করে পিঠে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড় দিলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। গুলিস্তান থেকে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে লাইন দিয়ে বাসে উঠলাম। এখানে ভাগ্য খানিকটা িসুপ্রসন্ন ছিল, টিকিট লাইনের সামনের দিকে থাকা একজন, আমি একা দেখে দয়া পরবশত হয়ে আমার টিকেট খানি কেটে দিলেন। ভালোয় ভালোয় শুরু হলো যাত্রা। ছোটখাট কিছু বিড়ম্বনা পেরিয়ে আমি যখন মাওয়া ঘাটে পৌছালাম ঘড়ির কাঁটা তখন ৬ টা ছুঁই ছুঁই। ছুটতে ছুটতে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সময় নষ্ট না করে ছুটলাম ফেরির দিকে। এখানেও কপাল ভালো ছুটতে ছুটতে উঠে পড়লাম সেই ফেরিটায় যেটা ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মাওয়া রুটে সব সময় লঞ্চে নদী পার হই, এই প্রথম এই রুটে ফেরিতে পার হচ্ছি একা একা। তাই প্রথমেই মাথায় কাজ করছিল সুইটেবল একটা জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে নিষ্চিন্ত হয়ে বসা যাবে এবং ইফতার করা যাবে। ফেরিতে উঠে তেমন একটা জায়গা পেয়েও গেলাম। আমার আশেপাশে ৬/৭ জোড়া দম্পতি তাদের আন্ডা বাচ্চাসহ ২০/২৫ জনের একটা দল ছিল। আর ছিল কিছু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে, মনে হচ্ছিল হয়তো কাছাকাছি বাড়ি তাই সবাই একসঙ্গে মজা করতে করতে যাচ্ছে। জায়গা পেয়ে স্থির হয়ে বসে দেখলাম চারপাশে ইফতার নিয়ে বেশ একটা হুলস্থল ভাব... দম্পতিদের পুরুষগুলো ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ইফতার কিনে আনছে। তখন আমার মনে পড়লো ইফতার কেনা হয়নি। ফেরিতে ওঠার তাড়ায় ইফতারি কেনার কথা মনে ছিল না, আর পথে কিছু কিনে নেবো ভেবে পানি আর কিছু ফল ছাড়া আর খাবার আর কিছুই সঙ্গে নেইনি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরি ছেড়ে দেবে তাই নামাও যাবে না, অগত্যা দম্পতিদের এক নারীকে ব্যাগের পাহারায় রেখে ফেরিতে কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে গেলাম। পাটুরিয়া রুটের ফেরিতে ভালোমন্দ অনেক কিছু পাওয়া গেলেও মাওয়া রুটের ফেরির অবস্থা দেখলাম একেবারেই করুন... :( এক প্যাকেট বেঙ্গল বিস্কুট আর এক প্যাকেট প্রাণ মুড়ি কিনে বসার জায়গায় ফিরে দেখলাম জায়গা প্রায় বেদখল। কোন রকমে আবার জায়গা পূরুদ্ধার করে বসে চারপাশে মনোযোগ দিলাম।তখনই প্রথম মনে হলো ইশশশ সাথে আরেকজন থাকলে কত ভালো হত... আমার পাশে থাকা জুটিদের ছেলেগুলো আয়োজন করে ইফতার রেডি করছে, ছোলা, পেয়াঁজু, বেগুনী... আরো কতকি... তখনই মনে হলো কী এমন ক্ষতি হতো এমন কেউ সঙ্গে থাকলে :( প্রায় দুই ঘন্টা ফেরিতে দেখি একটু পর পর এটা সেটা কিনে আনে, আমি চুপচাপ দেখি... দেখি আর মন খারাপ করি... মন খারাপ করি আর ভাবি.... ভাবি আর ভাবি আমার কেন এমন লাগে??? আমার কেন মন খারাপ হয়? বিষয়টা একটুও পছন্দ হচ্ছেনা... কিন্তু তাও মন কেমন করছে স্ট্রেইঞ্জ!!! ওদিকে আমি আর ফেরি এগিয়ে চলে। চলতে চলতে ফেরি যখন তীরের কাছাকাছি চলে আসে ততক্ষনে ঘড়ির কাটা আটটার ঘর ছুঁই ছুঁই... ব্যাগ বোচকা নিয়ে আমি নামার জন্য রেডি। ঘাটের কাছাকাছি আসতেই লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। তখন আমার মাথায় কেবল একটা চিন্তা, খুলনা পর্যন্ত কি করে পৌছাবো। তবে এর মধ্যে একটা কথা ঠিকই মাথায় উঁকি দিয়ে ছিল, সঙ্গে কেউ থাকলে আমাকে নিশ্চই এভাবে লাফিয়ে ঝাপিয়ে নামতে দিত না... :P

লঞ্চ থেকে নেমে অনেকটা হাটার পথ। একদম সিনেমা নাটকে দেখা যায় যেমন, ঠিক তেমন ঘুট ঘুটে অন্ধকার পথ। রাস্তার দুই পাশে দোকান-টোকানও নাই... আলো বলতে কেবল কিছু সময় পর পর ফেরি থেকে নামা এবং বিপরীত থেকে আসা দু’একটা গাড়ি আর মোটর সাইকেলের আলো। সে আলো অন্ধকার কমানোর চেয়ে বরং বাড়িয়ে দিয়েই যায়। কে না জানে, অন্ধকারে আলো জ্বলে আবার নিভে গেলে অন্ধকার আরো বাড়ে। যাই হোক, রাস্তায় মাঝে যে দু’এক জন লোকের দেখা মিলছিলো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে পথ চলছিলাম। তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম খুলনায় যাবার বাস বা মাইক্রোবাস কোথায় পাবো তারা উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সম্পুরক প্রশ্ন করছিলেন... “আপনি একা?” “আপনার সাথের লোক কই আম্মা?” “আপনার সাথে আর কেউ নাই?” এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমি যখন ঘাড় উচুঁ করে “নাহ আমার সঙ্গে কেউ নাই, আমি একা” বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন টের পাচ্ছিলাম পেছন থেকে আমাকে অনুসরন করছে কয়েক জোড়া অবাক চোখ। নাহ্ আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি সেই দৃষ্টিতে কোন লালা ঝরছিল না, রাগ, বিরক্তি বা অন্য কিছুই নয়। নারীর সহজাত যে অনুভূতি বোধ তাতেই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে অনুসরেন করা ওই চোখ গুলোয় ছিল বিস্ময় আর ছিল সমিহ আর শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি, নিজের অবস্থানের প্রতি ভালোবাসা আরেকটু বেড়ে গেলো। পাশে কেউ না থাকলেও, অন্যকারো উপর নির্ভর না করেও এই জীবনটা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয়া যে সম্ভব, এবং এখনো সমাজের সব মানুষ যে পচেঁ যায়নি এটা অনুভব করতে পেরে বেশ ভালো লাগছিল :)

বাস পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি পৌছানো মাত্রই পেয়ে গেলাম একটা বাস, কাঙ্খিত সিট ও পেয়ে গেলাম যদিও তা ছিল একদম পেছনে। সব গুছিয়ে বসলাম নিশ্চিন্ত মনে; কারন আর কোন ঝামেলা না হলে এই বাসটিই আমাকে পৌছে দেবে আমার কাঙ্খিত গন্তব্যে। নিশ্চিন্তে বসে, সারাদিন রোজা থাকার ক্লান্তিতে বেশ একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। একে তো ভীষন ক্লান্ত তার উপর চলন্ত বাসের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে মাথাকে আর সোজা রাখতে পাছিলাম না। তখন আবার মনে হল নাহ পাশে একটা কাধ থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো? নিশ্চিন্তে অন্তত মাথাটা েরাখা যেত। সেই ঘুম ঘুম চোখেই তখন মাথায় আসে, আসলে আমরা কিসে তৃপ্ত... ওপর থেকে যতগুলো কথা লিখেছি সব কথাগুলো একে একে তখই মাথায় আসে। এই যে আমার রানীর মত জীবনটা এই জীবনটার প্রেমে আমি পড়তে চাইনা। বিগত সময়ে বুঝে গেছি সেটা আমার, আমার পরিবার সর্বপরি সমাজের জন্য ততটা গ্রহনযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর নয়। আবার এই জীবনটা হারিয়ে ফেলতেও আমি ভীষন ভয় পাই...

Sunday, October 6, 2013

শাড়ি---সুবোধ সরকার

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখল সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, ‘ তোর নাম অভিমান’
তৃতীয় থাকে তিনটি ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রং যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ ।
সারা বছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি সে কি করে এক জীবনে পড়বে ?

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সন্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে ।
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডান দিকে ।
যাকে বলে এল ।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিস থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে ।
এর নাম রাজনীতি, বলেছিল পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা।
একদিন দুপুরে শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে ।
শাশুড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে সে একা ।

কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘বাঁচাও’
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা….