ঈদে বা ছুটি ছাটায় যাতায়াত সময় বাচাঁতে আমি ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভেঙে ভেঙেই খুলনা যাই। এজন্য টিকিট নিয়ে খুব একটা তোড়জোড় থাকেনা। উদ্দেশ মানে যদি destination না ধরে plan ধরা হয় তবে আমার এই যাত্রাকে অনেকটাই নিরুদ্দেশ যাত্রা বলা যায়। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি! ৭ তারিখে অফিস করে তাড়াহুড়া করে পিঠে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড় দিলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। গুলিস্তান থেকে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে লাইন দিয়ে বাসে উঠলাম। এখানে ভাগ্য খানিকটা িসুপ্রসন্ন ছিল, টিকিট লাইনের সামনের দিকে থাকা একজন, আমি একা দেখে দয়া পরবশত হয়ে আমার টিকেট খানি কেটে দিলেন। ভালোয় ভালোয় শুরু হলো যাত্রা। ছোটখাট কিছু বিড়ম্বনা পেরিয়ে আমি যখন মাওয়া ঘাটে পৌছালাম ঘড়ির কাঁটা তখন ৬ টা ছুঁই ছুঁই। ছুটতে ছুটতে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সময় নষ্ট না করে ছুটলাম ফেরির দিকে। এখানেও কপাল ভালো ছুটতে ছুটতে উঠে পড়লাম সেই ফেরিটায় যেটা ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মাওয়া রুটে সব সময় লঞ্চে নদী পার হই, এই প্রথম এই রুটে ফেরিতে পার হচ্ছি একা একা। তাই প্রথমেই মাথায় কাজ করছিল সুইটেবল একটা জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে নিষ্চিন্ত হয়ে বসা যাবে এবং ইফতার করা যাবে। ফেরিতে উঠে তেমন একটা জায়গা পেয়েও গেলাম। আমার আশেপাশে ৬/৭ জোড়া দম্পতি তাদের আন্ডা বাচ্চাসহ ২০/২৫ জনের একটা দল ছিল। আর ছিল কিছু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে, মনে হচ্ছিল হয়তো কাছাকাছি বাড়ি তাই সবাই একসঙ্গে মজা করতে করতে যাচ্ছে। জায়গা পেয়ে স্থির হয়ে বসে দেখলাম চারপাশে ইফতার নিয়ে বেশ একটা হুলস্থল ভাব... দম্পতিদের পুরুষগুলো ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ইফতার কিনে আনছে। তখন আমার মনে পড়লো ইফতার কেনা হয়নি। ফেরিতে ওঠার তাড়ায় ইফতারি কেনার কথা মনে ছিল না, আর পথে কিছু কিনে নেবো ভেবে পানি আর কিছু ফল ছাড়া আর খাবার আর কিছুই সঙ্গে নেইনি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরি ছেড়ে দেবে তাই নামাও যাবে না, অগত্যা দম্পতিদের এক নারীকে ব্যাগের পাহারায় রেখে ফেরিতে কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে গেলাম। পাটুরিয়া রুটের ফেরিতে ভালোমন্দ অনেক কিছু পাওয়া গেলেও মাওয়া রুটের ফেরির অবস্থা দেখলাম একেবারেই করুন... :( এক প্যাকেট বেঙ্গল বিস্কুট আর এক প্যাকেট প্রাণ মুড়ি কিনে বসার জায়গায় ফিরে দেখলাম জায়গা প্রায় বেদখল। কোন রকমে আবার জায়গা পূরুদ্ধার করে বসে চারপাশে মনোযোগ দিলাম।তখনই প্রথম মনে হলো ইশশশ সাথে আরেকজন থাকলে কত ভালো হত... আমার পাশে থাকা জুটিদের ছেলেগুলো আয়োজন করে ইফতার রেডি করছে, ছোলা, পেয়াঁজু, বেগুনী... আরো কতকি... তখনই মনে হলো কী এমন ক্ষতি হতো এমন কেউ সঙ্গে থাকলে :( প্রায় দুই ঘন্টা ফেরিতে দেখি একটু পর পর এটা সেটা কিনে আনে, আমি চুপচাপ দেখি... দেখি আর মন খারাপ করি... মন খারাপ করি আর ভাবি.... ভাবি আর ভাবি আমার কেন এমন লাগে??? আমার কেন মন খারাপ হয়? বিষয়টা একটুও পছন্দ হচ্ছেনা... কিন্তু তাও মন কেমন করছে স্ট্রেইঞ্জ!!! ওদিকে আমি আর ফেরি এগিয়ে চলে। চলতে চলতে ফেরি যখন তীরের কাছাকাছি চলে আসে ততক্ষনে ঘড়ির কাটা আটটার ঘর ছুঁই ছুঁই... ব্যাগ বোচকা নিয়ে আমি নামার জন্য রেডি। ঘাটের কাছাকাছি আসতেই লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। তখন আমার মাথায় কেবল একটা চিন্তা, খুলনা পর্যন্ত কি করে পৌছাবো। তবে এর মধ্যে একটা কথা ঠিকই মাথায় উঁকি দিয়ে ছিল, সঙ্গে কেউ থাকলে আমাকে নিশ্চই এভাবে লাফিয়ে ঝাপিয়ে নামতে দিত না... :P
লঞ্চ থেকে নেমে অনেকটা হাটার পথ। একদম সিনেমা নাটকে দেখা যায় যেমন, ঠিক তেমন ঘুট ঘুটে অন্ধকার পথ। রাস্তার দুই পাশে দোকান-টোকানও নাই... আলো বলতে কেবল কিছু সময় পর পর ফেরি থেকে নামা এবং বিপরীত থেকে আসা দু’একটা গাড়ি আর মোটর সাইকেলের আলো। সে আলো অন্ধকার কমানোর চেয়ে বরং বাড়িয়ে দিয়েই যায়। কে না জানে, অন্ধকারে আলো জ্বলে আবার নিভে গেলে অন্ধকার আরো বাড়ে। যাই হোক, রাস্তায় মাঝে যে দু’এক জন লোকের দেখা মিলছিলো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে পথ চলছিলাম। তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম খুলনায় যাবার বাস বা মাইক্রোবাস কোথায় পাবো তারা উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সম্পুরক প্রশ্ন করছিলেন... “আপনি একা?” “আপনার সাথের লোক কই আম্মা?” “আপনার সাথে আর কেউ নাই?” এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমি যখন ঘাড় উচুঁ করে “নাহ আমার সঙ্গে কেউ নাই, আমি একা” বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন টের পাচ্ছিলাম পেছন থেকে আমাকে অনুসরন করছে কয়েক জোড়া অবাক চোখ। নাহ্ আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি সেই দৃষ্টিতে কোন লালা ঝরছিল না, রাগ, বিরক্তি বা অন্য কিছুই নয়। নারীর সহজাত যে অনুভূতি বোধ তাতেই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে অনুসরেন করা ওই চোখ গুলোয় ছিল বিস্ময় আর ছিল সমিহ আর শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি, নিজের অবস্থানের প্রতি ভালোবাসা আরেকটু বেড়ে গেলো। পাশে কেউ না থাকলেও, অন্যকারো উপর নির্ভর না করেও এই জীবনটা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয়া যে সম্ভব, এবং এখনো সমাজের সব মানুষ যে পচেঁ যায়নি এটা অনুভব করতে পেরে বেশ ভালো লাগছিল :)
বাস পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি পৌছানো মাত্রই পেয়ে গেলাম একটা বাস, কাঙ্খিত সিট ও পেয়ে গেলাম যদিও তা ছিল একদম পেছনে। সব গুছিয়ে বসলাম নিশ্চিন্ত মনে; কারন আর কোন ঝামেলা না হলে এই বাসটিই আমাকে পৌছে দেবে আমার কাঙ্খিত গন্তব্যে। নিশ্চিন্তে বসে, সারাদিন রোজা থাকার ক্লান্তিতে বেশ একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। একে তো ভীষন ক্লান্ত তার উপর চলন্ত বাসের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে মাথাকে আর সোজা রাখতে পাছিলাম না। তখন আবার মনে হল নাহ পাশে একটা কাধ থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো? নিশ্চিন্তে অন্তত মাথাটা েরাখা যেত। সেই ঘুম ঘুম চোখেই তখন মাথায় আসে, আসলে আমরা কিসে তৃপ্ত... ওপর থেকে যতগুলো কথা লিখেছি সব কথাগুলো একে একে তখই মাথায় আসে। এই যে আমার রানীর মত জীবনটা এই জীবনটার প্রেমে আমি পড়তে চাইনা। বিগত সময়ে বুঝে গেছি সেটা আমার, আমার পরিবার সর্বপরি সমাজের জন্য ততটা গ্রহনযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর নয়। আবার এই জীবনটা হারিয়ে ফেলতেও আমি ভীষন ভয় পাই...
লঞ্চ থেকে নেমে অনেকটা হাটার পথ। একদম সিনেমা নাটকে দেখা যায় যেমন, ঠিক তেমন ঘুট ঘুটে অন্ধকার পথ। রাস্তার দুই পাশে দোকান-টোকানও নাই... আলো বলতে কেবল কিছু সময় পর পর ফেরি থেকে নামা এবং বিপরীত থেকে আসা দু’একটা গাড়ি আর মোটর সাইকেলের আলো। সে আলো অন্ধকার কমানোর চেয়ে বরং বাড়িয়ে দিয়েই যায়। কে না জানে, অন্ধকারে আলো জ্বলে আবার নিভে গেলে অন্ধকার আরো বাড়ে। যাই হোক, রাস্তায় মাঝে যে দু’এক জন লোকের দেখা মিলছিলো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে পথ চলছিলাম। তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম খুলনায় যাবার বাস বা মাইক্রোবাস কোথায় পাবো তারা উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সম্পুরক প্রশ্ন করছিলেন... “আপনি একা?” “আপনার সাথের লোক কই আম্মা?” “আপনার সাথে আর কেউ নাই?” এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমি যখন ঘাড় উচুঁ করে “নাহ আমার সঙ্গে কেউ নাই, আমি একা” বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন টের পাচ্ছিলাম পেছন থেকে আমাকে অনুসরন করছে কয়েক জোড়া অবাক চোখ। নাহ্ আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি সেই দৃষ্টিতে কোন লালা ঝরছিল না, রাগ, বিরক্তি বা অন্য কিছুই নয়। নারীর সহজাত যে অনুভূতি বোধ তাতেই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে অনুসরেন করা ওই চোখ গুলোয় ছিল বিস্ময় আর ছিল সমিহ আর শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি, নিজের অবস্থানের প্রতি ভালোবাসা আরেকটু বেড়ে গেলো। পাশে কেউ না থাকলেও, অন্যকারো উপর নির্ভর না করেও এই জীবনটা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয়া যে সম্ভব, এবং এখনো সমাজের সব মানুষ যে পচেঁ যায়নি এটা অনুভব করতে পেরে বেশ ভালো লাগছিল :)
বাস পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি পৌছানো মাত্রই পেয়ে গেলাম একটা বাস, কাঙ্খিত সিট ও পেয়ে গেলাম যদিও তা ছিল একদম পেছনে। সব গুছিয়ে বসলাম নিশ্চিন্ত মনে; কারন আর কোন ঝামেলা না হলে এই বাসটিই আমাকে পৌছে দেবে আমার কাঙ্খিত গন্তব্যে। নিশ্চিন্তে বসে, সারাদিন রোজা থাকার ক্লান্তিতে বেশ একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। একে তো ভীষন ক্লান্ত তার উপর চলন্ত বাসের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে মাথাকে আর সোজা রাখতে পাছিলাম না। তখন আবার মনে হল নাহ পাশে একটা কাধ থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো? নিশ্চিন্তে অন্তত মাথাটা েরাখা যেত। সেই ঘুম ঘুম চোখেই তখন মাথায় আসে, আসলে আমরা কিসে তৃপ্ত... ওপর থেকে যতগুলো কথা লিখেছি সব কথাগুলো একে একে তখই মাথায় আসে। এই যে আমার রানীর মত জীবনটা এই জীবনটার প্রেমে আমি পড়তে চাইনা। বিগত সময়ে বুঝে গেছি সেটা আমার, আমার পরিবার সর্বপরি সমাজের জন্য ততটা গ্রহনযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর নয়। আবার এই জীবনটা হারিয়ে ফেলতেও আমি ভীষন ভয় পাই...
0 comments:
Post a Comment
Thanks for visiting my Blog