ঘটনা ১...
নিউ
ইয়র্কের ভারতীয় কনসুলেটের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল দেবযানীকে ভিসা আবেদনে
ভারতীয় গৃহকর্মীর বিষয়ে ভুয়া তথ্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মেয়েকে
স্কুলে নামিয়ে দেয়ার সময় রাস্তা থেকেই দেবযানীকে গ্রেপ্তার করে প্রকাশ্যে
তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হয়। ভারতের দাবি ওই কূটনীতিককে বিবস্ত্র করে
তার দেহে তল্লাশি চালানোর পর তাকে মাদক চোরাচালানী ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে
কারাকক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে আড়াই লাখ ডলার জামিনে তাকে মুক্তি দেয়া
হয়। দুই কন্যা সন্তানের জননী ৩৯ বছর বয়সী দেবযানী কন্স্যুলেটের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নারী বিষয়ক কনসাল জেনারেল।
প্রতিক্রিয়া:
- ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দেবযানীকে ‘কূটনৈতিক সুবিধা’ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘বর্বর আচরণ’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
- সরকারের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘আচরণের’ প্রতিবাদস্বরূপ ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দেননি।
- রাহুল গান্ধী ও মোদির সঙ্গে ওই প্রতিনিধি দলের আলাদা বৈঠকের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তারা তা বাতিল করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দেও তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।
- দেবযানীকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন ও লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারও যুক্তরাষ্ট্রর কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বর্জন করেন।
- ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে পাল্টা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
- দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে থেকে নিরাপত্তা ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়েছে।
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের জন্য বিমান বন্দরের পাস বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জন্য আমদানি ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
- দূতাবাসের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা নিয়মিত কর দেন কি না, তা দেখতে ভিসাসহ তাদের বেতন ও ব্যাংক হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য চেয়েছে ভারত।
- যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেটের সব কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র অবিলম্বে জমা দেয়ার নির্দেশসহ তাদের ও তাদের পরিবারের গৃহকর্মীরাসহ সব বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর।
- পুরো জাতি যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা পাঠাতে চাইছে যে, তাদের দেবযানী বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ ভারত চুপচাপ মেনে নিচ্ছেনা।
ঘটনা ২...
‘ঐক্যবদ্ধ
পাকিস্তানের’ একনিষ্ঠ সমর্থক কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ জানিয়ে ১৬
ডিসেম্বর পাকিস্তান পার্লামেন্টে শোক প্রস্তাব গ্রহণ। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত
জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা নির্দোষ ছিলেন বলে দাবি করেছেন
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা ইমরান খান।
প্রতিক্রিয়া:
- আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের পদক্ষেপকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নাক গলানোর শামিল’ বিবেচনা করে তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
- এবিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ৩৬ ব্যক্তি। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, “যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী ঘটনাগুলো আমাদের দারুণভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।
- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং ৭১’এ নির্যাতিত নারীদের নেতৃত্বে পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করছে গণজাগরণ মঞ্চ।
ঘটনা ৩...
মহান
বিজয় দিবস সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠানে যাননি ইউরোপীয় ইউনিয়নের
(ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা। রীতি অনুযায়ী এ দিনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই প্রথমে
রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে
শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই বিদেশী কূটনীতিকরাও সেখানে উপস্থিত থাকেন। আগেরদিন
বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের অফিস থেকে এক
বার্তায় জানানো হয় যে এবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারা যোগ দিচ্ছেন না। যোগ
না দেবার কারণ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি বিষয় উল্লেখ করে।
প্রথমত: ১৬ ডিসেম্বর তাদের একটি সমন্বয় সভা আছে।
দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশের
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন যেটি ইউরোপীয়
পার্লামেন্ট তারা জমা দেবেন। একারনে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের
অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা ব্যস্ত থাকবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়
থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয়
অনুষ্ঠানে বিদেশী কূটনীতিকদের যোগ না দেবার ঘটনা অতীতে কখনোই ঘটেনি। বিজয়
দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়া বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং
অবমাননাকর বলেও জানানো হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে।
কিন্তু গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার পরও সাভারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাননি ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয়
ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকে সে সমন্বয় সভার কথা বলা হচ্ছে সেটি শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে দশটার পরে।
কিন্তু স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা সাধারণত সকাল সাতটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
প্রতিক্রিয়া:
- বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়।
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টি জানিযে বলা হয় “বাংলাদেশ চিন্তাই করতে পারছেনা যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেযোগদান থেকে বিরত থাকতে পারে। বিজয় দিবস বাংলাদেশের মানুষের আবেগ এবং গর্বের বিষয়”
আমার শিক্ষা...
নকল
করতে ওস্তাদ আমরা। জামা কাপড় থেকে শুরু করে গান খাবার কোথায় নেই নকল করার
প্রবণতা। ভারতীয় পণ্য, পাকিস্তানের লন না হলে আমাদের ফ্যাশণ পূর্ণতা পায়
না। প্রতি ঈদে ভারতের নায়িকাদের নামের পোশাক গায়ে না চড়ালে আমাদের ইজ্জত
থাকে না। অথচ ভারত-পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশপ্রেম শিখে উঠতে পারলাম না।
দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দল কিভাবে এক হয়ে কাজ করে এটা শিখে উঠতে পারলাম
না। এখোনো শেখা হয়নি কিভাবে দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তান জিন্নাহ কে জাতির
পিতা সম্বোধন করে। তখন পাকিস্তানের জাতির পিতা আর মুসলিম পাকিস্তানিদের
জাতির পিতায় কোন কাটাকাটি লাগে না। আবার কংগ্রেস-বিজেপি এক মঞ্চে দাড়িয়ে
যখন গান্ধির জন্ম মৃত্যু দিবস পালন করে তখন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বাধা হয়ে
আসে না। জাতি হিসেবে আমরা অনেক গর্ব করি। আমাদের জাতীয়তা বোধের ভারে দেশ
রীতিমত ভারাক্রান্ত। অথচ আজও আমরা এক জাতি হয়ে উঠলাম না।
সকাল সকাল গানটা মাথায় এসেছিল।
“মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই
দীন দুখিনী মা যে তোদের তার বেশী আর সাধ্য নাই।।
ঐ মোটা সুতোর সঙ্গে মায়ের অপার স্নেহ দেখতে পাই
আমরা এমনি পাষাণ,তাই ফেলেঐ, পরের দোরে ভিক্ষে চাই।।
ঐ দু:খী মায়ের ঘরে তোদের সবার প্রচুর অন্ন নাই,
তবু তাই বেচে কাঁচ, সাবান, মোজাকিনে করলি ঘর বোঝাই।।
আয়রে আমরা মায়ের নামে এই প্রতিজ্ঞা করব ভাই
পরের জিনিস কিনব না যদি-মায়ের ঘরের জিনিস পাই।”
বাঙালির
প্রথম কাপড়কল 'বঙ্গলক্ষ্মী কটনমিল'-এর মোটা সুতোয় শাড়ি তৈরি উপলক্ষে এই
গানটি লেখেনরজনীকান্ত সেন। পরে স্বদেশি আন্দোলনে বিদেশি পণ্য বর্জনের
কর্মসূচি প্রচারে মূল ভূমিকা পালন করেছিল এই গান। আমাদের আসলে আবারো একটা
স্বদেশী আন্দোলন দরকার। দিন শেষে আশার আলো পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে
গণজাগরণ মঞ্চের মিছিল এবং অবস্থান। গণজাগরণ মঞ্চই করতে পারবে আরো একটা
স্বদেশী আন্দোলন।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for visiting my Blog