Friday, October 25, 2013

স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা”/ সুখপাঠ্য নয় তবে প্রয়োজনীয় পাঠ্য

সংগ্রহ পর্ব

এটিএন নিউজের নিউজ এবং কারেন্ট এ্যফেয়ার্স এডিটর প্রভাষ আমিনের লেখা বইয়ের নাম “স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা” যদিও নামটি পড়ে কারোই বোঝার সাধ্য নেই এটা আসলে কিসের বই‍!!! নামের মধ্যেই দারুন নাটকীয়তা। তার চেয়েও বড় নাটকের জন্মদিয়ে বইটি আমার হস্তগত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩’র একুশে বই মেলায়, কিন্তু আমার তখন বইটি কেনা হয়ে ওঠেনি। এরপর প্রভাষ’দার নিয়মিত রিমাইন্ডারের ফলে একদিন সত্যি সত্যি বইটি কেনার জন্য হাজির হলাম আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানে। কিন্তু হাজির হলেই তো আর হবেনা, সেখানে তো বইটি পেতে হবে! সব দোকান খুঁজে পেতে যখন প্রায় কনফিউজড (এরই মধ্যে আমি আরো দুটো বই কিনে ফেলেছি এবং নির্ধারিত বই কেনার টাকা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। তখন প্রভাষ’দা জানালেন তার বইটি আজিজে পাওয়া যাবেনা। একটি এজেন্সির নাম জানিয়ে বললেন, অনলাইনে অর্ডার দিলে তাঁরা পৌছে দেবে। কিন্তু আমার তক্ষুনি বইটি চাই চাই… কারন আমার আশংকা ছিল সেই বই আমার হাতে আসতে আসতে হয়তো আমি বাকি টাকা শেষ করে ফেলবো :P । শেষে দাদা জানালেন, হয়তো কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ঐতিহ্যের শোরুম আছে যেখানে বইটি পাওয়া যেতে পারে। এরপর অভিযান কাটাঁবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে…ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি! আপনারা হয়তো ভাবছেন, কি আছে সেই বইএ? কি জানতে পারবেন বইটি পড়ে? হ্যাঁ ক্যনভাসারদের মত বলতে পারি, এই বইটি পড়লে জানতে পারবেন… 

থাক, সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসি। আগে সেই বই কেনার কাহিনী শেষ করি। কনকর্ড এম্পোরিয়ামে পৌছে, এই দোকান সেই দোকান ঘুরে (বই এর দোকানে ঘুরতে খুব একটা খারাপ লাগেনা। দোকান পুরোনো হলে একটু হাচিঁ টাচি হয়, তবে এই মার্কেটের দোকান গুলো ঝা চকচকে) আমি যখন ঐতিহ্যের দরজায় পৌছালাম তখন দেখি দরজা বন্ধ  :( পাশের দোকানী বললেন, বন্ধনা, ওই দোকানের লোক নামাজ পড়তে গেছে। আমি আর কি করি, যে দোকানগুলো ঘোরা বাকি ছিল সেগুলো ঘুরে দেখতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে গেলাম পরিচিত এক ভাইকে, যার সঙ্গে অনেক বছর পর দেখা। অনেক অনেক গালগল্প শেষে আবার ফিরলাম ঐতিহ্যে এবং বইটিও খুঁজে পেলাম… :)।

যারা ভাবছেন যাক!!! শিবেরগীত অবশেষে শেষ হলো তাদের আশাহত করে জানাচ্ছি পিকচার আবভিবাকি মেরে দোস্ত ;) ।

বইতো পেলাম, কিন্তু বই’র দাম দেখেতো আমার চক্ষুস্থির ৩ শত ৭৫ টাকা মাত্র। কমিশন টমিশন কি কি সব বাদ দিয়ে, ২ শত ৮০ টাকা। আচ্ছা ঠিক আছে মারি তো গন্ডার লুটিতো ভান্ডার এই ভেবে মানি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি আমি ইতোপূর্বে আরো ৩ টি বই কিনে টাকা খরচ করে ফেলায়, কিছু টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। আর বইটারও এমনই কপাল,সবসময় ব্যাগের বিভিন্ন চিপা চাপায় খুঁজলে কিছু না কিছু বের হয় অথচ সেদিন একটি ফুটো পয়সাও বেরোলোনা। কয়েকটি টাকার অভাবে বইখানি আবার শেলফ’এ রেখে ফিরে এলাম আর দোকানীকে কথা দিয়ে এলাম পর দিন অবশ্যই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। এর মধ্যে আবার প্রভাষ’দা :( … জানালাম বিশেষ জটিলতার কারনে বইটি সংগ্রহ করা হয়নি এবং তাকেও একই আশ্বাস দিলাম পরদিন নিশ্চই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। ভদ্রলোকের ১ জবান, নড়চড় নাই। সেজন্যই বইটি আজ আমার আশে পাশেই মহা আনন্দে গড়াগড়ি খায়।


অবশেষে আমি বইটি শেষ করেছি
বইটি কিনে বাসায় পৌছাতে যতটুকু সময় ঠিক ততটুকু সময় পরেই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম... নাহ্ একটু ভুল হলো, পড়তে শুরু করার আগে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বইটি উল্টে পাল্টে গবেষণা করেছি। গবেষণা করার অনেক কারন ছিল। এটা সেই বই, যে বই আমি রীতিমত অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়ে কিনেছি :D ... যেই বইটার জন্য কেবল বইয়ের লেখক নন আমার জানা চেনা আরো অনেকেই প্রচার চালিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যানেল আই’র নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান। প্রথমে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা খানিকটা আন্দাজ করেছি। কিন্তু বইটিতে লেখকের ভুমিকা পড়ে বুঝলাম আমার আন্দাজ ভুল নয়। মুখবন্ধে মুন্নী সাহার লেখাটি পড়ে বুঝতে পারলাম প্রভাষ’দাকে আসলে সবাই ভীষন পছন্দ করে। তিনি যে মিশুক, বন্ধুবৎসল এটা আগেই জানা ছিল। দারুন সেন্স অব হিউমারের অধিকারী এটাও আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তা যে এতটা তা আগে বুঝতে পারিনি। পড়া শুরু করতেই বুঝলাম এই বইয়ে স্থান পাওয়া অনেক গুলো লেখা আমি আগেই পড়ে ফেলেছি। এখানে প্রশ্ন করাই যেতে পারে তাহলে… তাহলে শুধু শুধু আমি বইটি কেন কিনলাম!?! এই প্রশ্ন মনে আসাই স্বাভাবিক। এই উত্তরের আগে ছোট্ট করে বলে রাখি অটোগ্রাফ কাহিনীটা। বইটি কিনে আগে প্রভাস'দা কে একটা ধন্যবাদ দেই কারন তাঁর কল্যাণেই বইএর একটা চমৎকার মার্কেট খুঁজে পেলা। জবাবে তিনি জানান, "বেশতো রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হলো।" আমি উত্তর দেই " নাহ কলা কিনতে গিয়ে পুরো কলা বাগান পেয়ে গেলাম B-) ।" এ কথা কেন বললাম সেটা প্রভাষ'দার অটোগ্রাফ নোটটা দেখলেই বোঝা যাবে।

পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম এতো কাহিনী করে বইটি কিনে আমি একটুও ভুল করিনি। এই বইকে মোটেও কাঁচকলা বলে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই… বরং আমাদের প্রজন্মের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি বই। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে একজন তরুণ তার সময়টাকে কিভাবে দেখতো বিচার করতো সেটা যেমন বোঝা যায় তেমনি সেই সময়টা কেমন ছিল সেটাও জানতে পারা যায়। পড়তে পড়তে আমার চোখে গণমাধ্যম, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, সচেতনতার তখন আর এখন ঠিক যতটা ধরা পড়েছে, তেমনটাই জেনেছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা, এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে এক তরুণ গণমাধ্যম কর্মীর ভাবনা। আবার চিত্রপটের ভিন্নতায় সেই তরুণকে দেখতে পাই একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক অবস্থায় আমাদের বয়সের তার সময়কে বিচার বিশ্লেষন করতে।

কেবল সেই সময় এই সময়ই না, সমসাময়ীক বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষন খুঁজে পাই একজন সচেতন মানুষ এবং সমান্তরাল ভাবে একজন সাংবাদিকের চোখে। এসব ঘটনার খুটিনাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এমন আরো বিভিন্ন বিষয়কে তুলে এনেছেন যা কিনা একজন সংবাদকর্মীর জানা থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতেই, প্রতিটি সংবাদকর্মীর পালন করা উচিত এই বিষয়গুলো।লেখক বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে মিডিয়ার অসচেতনতার যেমন কড়া সমালোচনা করেছেন পাশাপাশি মিডিয়া সচেতন এবং শক্তিশালী হলে কি কি অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা যায় সেটাও উদাহারণসহ ব্যাখ্যা করেছেন। তথ্য বহুল এই বইটি তাই কেবল পড়লেই হবেনা, সংগ্রহেও রাখতে হবে।

সাংবাদিকতা পেশাকে তীব্র ভাবে ভালোবেসে এক তরুণের সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার অনেক ছোট ছোট গল্পের সঙ্গে সেই তরুণের শিশুকাল থেকে গড়ে ওঠা অনেক ভাবনা এবং জীবন দর্শনও বিভিন্ন অলিগলি আর চোরা পথে এসে মিলে গেছে লেখার মাঝে। এই বৈচিত্রর ফলে বইটি পড়তে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা থেকে আনন্দ নিংড়ে নেয়ার যে অসাধারণ বর্ণনা আছে তাতে কেবল লেখকের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ পায় তা নয়, বোঝা যায় তাঁর অসামান্য প্রাণ শক্তি।

তাই ব্যক্তিগত যায়গা থেকে আমি বলতে পারি বর্তমান সময়ে যেকোন অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতিতে প্রভাষ আমিনের একটি বিশ্লেষন ধর্মী লেখার জন্য আমি যেমন করে অপেক্ষায় থাকি, ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করছি পরের বইটির জন্য।


পুণশ্চ: বইটি পড়া শুরু করলেই বোঝা যাবে, বইটি পড়তে আমি এত সময় কেন নিয়েছি.... এটা গোগ্রাসে গেলার মত কোন বই না। এটা অনেক ধীরে সুস্থে পড়তে হবে। কারন এই বইয়ের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে.... :)

কনিফউশান

ঈদে বা ছুটি ছাটায় যাতায়াত সময় বাচাঁতে আমি ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভেঙে ভেঙেই খুলনা যাই। এজন্য টিকিট নিয়ে খুব একটা তোড়জোড় থাকেনা। উদ্দেশ মানে যদি destination না ধরে plan ধরা হয় তবে আমার এই যাত্রাকে অনেকটাই নিরুদ্দেশ যাত্রা বলা যায়। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি! ৭ তারিখে অফিস করে তাড়াহুড়া করে পিঠে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড় দিলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। গুলিস্তান থেকে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে লাইন দিয়ে বাসে উঠলাম। এখানে ভাগ্য খানিকটা িসুপ্রসন্ন ছিল, টিকিট লাইনের সামনের দিকে থাকা একজন, আমি একা দেখে দয়া পরবশত হয়ে আমার টিকেট খানি কেটে দিলেন। ভালোয় ভালোয় শুরু হলো যাত্রা। ছোটখাট কিছু বিড়ম্বনা পেরিয়ে আমি যখন মাওয়া ঘাটে পৌছালাম ঘড়ির কাঁটা তখন ৬ টা ছুঁই ছুঁই। ছুটতে ছুটতে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সময় নষ্ট না করে ছুটলাম ফেরির দিকে। এখানেও কপাল ভালো ছুটতে ছুটতে উঠে পড়লাম সেই ফেরিটায় যেটা ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মাওয়া রুটে সব সময় লঞ্চে নদী পার হই, এই প্রথম এই রুটে ফেরিতে পার হচ্ছি একা একা। তাই প্রথমেই মাথায় কাজ করছিল সুইটেবল একটা জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে নিষ্চিন্ত হয়ে বসা যাবে এবং ইফতার করা যাবে। ফেরিতে উঠে তেমন একটা জায়গা পেয়েও গেলাম। আমার আশেপাশে ৬/৭ জোড়া দম্পতি তাদের আন্ডা বাচ্চাসহ ২০/২৫ জনের একটা দল ছিল। আর ছিল কিছু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে, মনে হচ্ছিল হয়তো কাছাকাছি বাড়ি তাই সবাই একসঙ্গে মজা করতে করতে যাচ্ছে। জায়গা পেয়ে স্থির হয়ে বসে দেখলাম চারপাশে ইফতার নিয়ে বেশ একটা হুলস্থল ভাব... দম্পতিদের পুরুষগুলো ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ইফতার কিনে আনছে। তখন আমার মনে পড়লো ইফতার কেনা হয়নি। ফেরিতে ওঠার তাড়ায় ইফতারি কেনার কথা মনে ছিল না, আর পথে কিছু কিনে নেবো ভেবে পানি আর কিছু ফল ছাড়া আর খাবার আর কিছুই সঙ্গে নেইনি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরি ছেড়ে দেবে তাই নামাও যাবে না, অগত্যা দম্পতিদের এক নারীকে ব্যাগের পাহারায় রেখে ফেরিতে কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে গেলাম। পাটুরিয়া রুটের ফেরিতে ভালোমন্দ অনেক কিছু পাওয়া গেলেও মাওয়া রুটের ফেরির অবস্থা দেখলাম একেবারেই করুন... :( এক প্যাকেট বেঙ্গল বিস্কুট আর এক প্যাকেট প্রাণ মুড়ি কিনে বসার জায়গায় ফিরে দেখলাম জায়গা প্রায় বেদখল। কোন রকমে আবার জায়গা পূরুদ্ধার করে বসে চারপাশে মনোযোগ দিলাম।তখনই প্রথম মনে হলো ইশশশ সাথে আরেকজন থাকলে কত ভালো হত... আমার পাশে থাকা জুটিদের ছেলেগুলো আয়োজন করে ইফতার রেডি করছে, ছোলা, পেয়াঁজু, বেগুনী... আরো কতকি... তখনই মনে হলো কী এমন ক্ষতি হতো এমন কেউ সঙ্গে থাকলে :( প্রায় দুই ঘন্টা ফেরিতে দেখি একটু পর পর এটা সেটা কিনে আনে, আমি চুপচাপ দেখি... দেখি আর মন খারাপ করি... মন খারাপ করি আর ভাবি.... ভাবি আর ভাবি আমার কেন এমন লাগে??? আমার কেন মন খারাপ হয়? বিষয়টা একটুও পছন্দ হচ্ছেনা... কিন্তু তাও মন কেমন করছে স্ট্রেইঞ্জ!!! ওদিকে আমি আর ফেরি এগিয়ে চলে। চলতে চলতে ফেরি যখন তীরের কাছাকাছি চলে আসে ততক্ষনে ঘড়ির কাটা আটটার ঘর ছুঁই ছুঁই... ব্যাগ বোচকা নিয়ে আমি নামার জন্য রেডি। ঘাটের কাছাকাছি আসতেই লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। তখন আমার মাথায় কেবল একটা চিন্তা, খুলনা পর্যন্ত কি করে পৌছাবো। তবে এর মধ্যে একটা কথা ঠিকই মাথায় উঁকি দিয়ে ছিল, সঙ্গে কেউ থাকলে আমাকে নিশ্চই এভাবে লাফিয়ে ঝাপিয়ে নামতে দিত না... :P

লঞ্চ থেকে নেমে অনেকটা হাটার পথ। একদম সিনেমা নাটকে দেখা যায় যেমন, ঠিক তেমন ঘুট ঘুটে অন্ধকার পথ। রাস্তার দুই পাশে দোকান-টোকানও নাই... আলো বলতে কেবল কিছু সময় পর পর ফেরি থেকে নামা এবং বিপরীত থেকে আসা দু’একটা গাড়ি আর মোটর সাইকেলের আলো। সে আলো অন্ধকার কমানোর চেয়ে বরং বাড়িয়ে দিয়েই যায়। কে না জানে, অন্ধকারে আলো জ্বলে আবার নিভে গেলে অন্ধকার আরো বাড়ে। যাই হোক, রাস্তায় মাঝে যে দু’এক জন লোকের দেখা মিলছিলো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে পথ চলছিলাম। তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম খুলনায় যাবার বাস বা মাইক্রোবাস কোথায় পাবো তারা উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সম্পুরক প্রশ্ন করছিলেন... “আপনি একা?” “আপনার সাথের লোক কই আম্মা?” “আপনার সাথে আর কেউ নাই?” এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমি যখন ঘাড় উচুঁ করে “নাহ আমার সঙ্গে কেউ নাই, আমি একা” বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন টের পাচ্ছিলাম পেছন থেকে আমাকে অনুসরন করছে কয়েক জোড়া অবাক চোখ। নাহ্ আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি সেই দৃষ্টিতে কোন লালা ঝরছিল না, রাগ, বিরক্তি বা অন্য কিছুই নয়। নারীর সহজাত যে অনুভূতি বোধ তাতেই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে অনুসরেন করা ওই চোখ গুলোয় ছিল বিস্ময় আর ছিল সমিহ আর শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি, নিজের অবস্থানের প্রতি ভালোবাসা আরেকটু বেড়ে গেলো। পাশে কেউ না থাকলেও, অন্যকারো উপর নির্ভর না করেও এই জীবনটা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয়া যে সম্ভব, এবং এখনো সমাজের সব মানুষ যে পচেঁ যায়নি এটা অনুভব করতে পেরে বেশ ভালো লাগছিল :)

বাস পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি পৌছানো মাত্রই পেয়ে গেলাম একটা বাস, কাঙ্খিত সিট ও পেয়ে গেলাম যদিও তা ছিল একদম পেছনে। সব গুছিয়ে বসলাম নিশ্চিন্ত মনে; কারন আর কোন ঝামেলা না হলে এই বাসটিই আমাকে পৌছে দেবে আমার কাঙ্খিত গন্তব্যে। নিশ্চিন্তে বসে, সারাদিন রোজা থাকার ক্লান্তিতে বেশ একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। একে তো ভীষন ক্লান্ত তার উপর চলন্ত বাসের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে মাথাকে আর সোজা রাখতে পাছিলাম না। তখন আবার মনে হল নাহ পাশে একটা কাধ থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো? নিশ্চিন্তে অন্তত মাথাটা েরাখা যেত। সেই ঘুম ঘুম চোখেই তখন মাথায় আসে, আসলে আমরা কিসে তৃপ্ত... ওপর থেকে যতগুলো কথা লিখেছি সব কথাগুলো একে একে তখই মাথায় আসে। এই যে আমার রানীর মত জীবনটা এই জীবনটার প্রেমে আমি পড়তে চাইনা। বিগত সময়ে বুঝে গেছি সেটা আমার, আমার পরিবার সর্বপরি সমাজের জন্য ততটা গ্রহনযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর নয়। আবার এই জীবনটা হারিয়ে ফেলতেও আমি ভীষন ভয় পাই...

Sunday, October 6, 2013

শাড়ি---সুবোধ সরকার

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখল সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, ‘ তোর নাম অভিমান’
তৃতীয় থাকে তিনটি ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রং যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ ।
সারা বছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি সে কি করে এক জীবনে পড়বে ?

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সন্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে ।
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডান দিকে ।
যাকে বলে এল ।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিস থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে ।
এর নাম রাজনীতি, বলেছিল পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা।
একদিন দুপুরে শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে ।
শাশুড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে সে একা ।

কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘বাঁচাও’
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা….